পর্তুগালের মধ্যাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৬ দমকলকর্মীসহ অন্তত ৬০ জন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মারসেলো রেবেলো।
গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি পর্তুগাল। শনিবারের দাবানল ৬০টিরও বেশি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দমকল বাহিনীর নয়শ' কর্মী। গণমাধ্যম জানায়, বেশিরভাগ মানুষ ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে ও আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। দাবানলে আটকে পড়াদের উদ্ধারে নিরাপত্তাবাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্বজনরা।
একজন বলেন, 'আমার বোন এবং বোনের মেয়েকে উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে আমি শঙ্কিত। তাদের আশপাশে যা ছিলো প্রায় সবকিছুই পুড়ে গেছ। আমার অন্য ভাই-বোন, বন্ধুরাও দাবানলের মুখে। সবদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।'
দাবানলে সব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা অবস্থান নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। ক্ষতিগ্রস্তের মনে স্বজন হারানোর বেদনা আর চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
একজন বলেন, 'আমরা অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছি। কি করবো বুঝে ওঠতে পারি নি। ভেবেছি ঘরের ভেতরে গিয়ে জরুরি কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসবো। সবকিছু চোখের পলকে ধ্বংস হয়ে গেলো।'
আরো একজন বলেন, 'সবকিছু দাবানলের মুখে ছিল। আগুনের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের মতো ধোঁয়া আসছিল। আমরা গত দুই দিন যাবৎ ঘরে ফিরতে পারি নি। দাবানলে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।'
গত কয়েকদিনের দাবদাহ এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দাবানলের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দাবানল গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট।
পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মারসেলো রেবেলো বলেন, 'এ মুহূর্তের আমাদের কষ্টগুলো পরিমাপ করা যাবে না। হতাহতের এ ঘটনা পর্তুগালের জন্য নির্মম এক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। দাবানলে পুড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সঙ্গে আমিও সমানভাবে ব্যথিত। দুর্ভাগ্যবশত আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব দাবানল দেখেছি, এর মধ্যে এবারের দাবানলকেই সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলে মনে হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সঠিক সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় না।'
পর্তুগিজদের দুর্যোগপূর্ণ এ অবস্থায় শোক জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। প্রয়োজনে ফায়ারফাইটিং বিমান পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।