ঐতিহাসিক শততম টেস্টে বাঘের থাবায় বধ হলো সিংহ। তাই তো আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে বাঁধন হারা আনন্দ । ক্রিকেট বিশ্বে চতুর্থ দেশ হিসেবে ইতিহাস রচনা করে শততম টেস্টে স্বপ্নিল জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শততম টেস্ট স্মরণীয় করে রাখলো টাইগাররা।
১৯১ রানের টার্গেট ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এ জয়ে সিরিজ ১-১-এ সমতায় শেষ হলো। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ তামিম আর সিরিজ সেরা সাকিব আল হাসান।
স্বপ্ন হলো সত্যি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাণ্ডুলিপিতে লিখা হলো নতুন একটি অধ্যায়। টেস্ট ক্রিকেটের সব থেকে নবীন দেশটি, জয় তুলে নিলো শততম টেস্টে। যা এলো দলের নবীন সদস্য মিয়াঁের হাত ধরে। ১৯ মার্চ তারিখটি টাইগারদের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।
কলম্বো টেস্টের শেষ দিন যে অপেক্ষা করছে রোমাঞ্চ নিয়ে, তা অবশ্য নিশ্চিত হয় ৪র্থ দিনেই। ৮ম উইকেটে দিলরুয়ান পেরেরা ও লাকমাল জুটি গলার কাটা হয়ে ছিল বাংলাদেশের জন্য। শেষদিনে তা হয়ে গেলো মাথা ব্যথার কারণ। বেশ আগ্রাসী হয়ে খেলতে থাকা এই দু'য়ের ব্যাটে লিড বাড়াতে থাকে লঙ্কানরা। অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে খেলতে থাকা লাকমাল ও পেরেরা দলের স্কোর পার করেন ৩০০।
তবে দ্রুত গতিতে রান তুলতে গিয়ে লঙ্কানরা নিজেরাই সর্বনাশ ডেকে আনে। ক্যারিয়ারের ৪র্থ ফিফটি তুলে নিয়ে পেরেরা শুভাশিসের থ্রোতে আউট হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। এরপর লাকমাল আর টেকেন নি বেশীক্ষণ। সাকিবের বলে ৪০ রানে তিনি আউট হলে, ৩১৯ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। ইতিহাস গড়ার জন্য বাংলাদেশের টার্গেট ১৯১।
পি সারা ওভালে সর্বোচ্চ রান তাড়া গড়ে জয়ের রেকর্ড ৩৫২। তাই টার্গেট অসম্ভব নয়। তামিম-সৌম্য'র ব্যাটে শুরুটাও ভালোই হয় বাংলাদেশের। কিন্তু হঠাৎ সেই পুরনো ভুত পেয়ে বসলো ব্যাটারদের। ২ বলের ব্যবধানে আউট সৌম্য ও ইমরুল।
টাইগার ভক্তদের মনে তখন শংকা, কলম্বোতে টাইগারদের কোনো বিয়োগান্তক গল্প রচনা হবে না তো। না তা হতে দেন নি তামিম ও সাব্বির। উইকেট কামড়ে থেকে ৩য় উইকেটে তারা জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকে টাইগারদের। লঙ্কান স্পিন ত্রয়ী হেরাথ-পেরেরা ও সান্দাকানকে সামলে ক্যারিয়ায়ের ২২ তম ফিফটি তুলে নেন তামিম। দারুণ ভাবে তাকে সঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী করতে থাকেন সাব্বির।
৩য় উইকেটে ১০৯ রান আসে এই জুটির ব্যাট থেকে। দলকে শুধু জয়ই না, শততম টেস্টটা রাঙ্গাতেও পারতেন তামিম। কিন্তু ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে বিলিয়ে দেন নিজের উইকেট। এরপর সাব্বির-সাকিবরা কিছু সময়ের ব্যবধানে ফিরে গেলেও, অধিনায়ক মুশফিকের হাতে তখন দলের দায়িত্ব। যোগ্য নেতার মতই জয়ের বন্দরে নোঙর ভিড়িয়ে দলকে এনে দেন ঐতিহাসিক জয়।