সম্মেলনের মৌসুম চলছে আওয়ামী লীগে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর, জেলা ও উপজেলায় দলীয় আলোচনার মূলে রয়েছে সম্মেলন। মহিলা শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগের সম্মেলন এর পর ঘনিয়ে আসছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠে। তাই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের জন্য সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমেই যাচাই-বাছাই করে বের করা হচ্ছে দলের ত্যাগী নেতাদের। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ৩০ নভেম্বর আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই শাখার সম্মেলন একযোগে আয়োজনের নির্দেশ দেন তিনি। সম্মেলনের আলোচনায় নেতারা বেশ সক্রিয় ও তৎপর হয়ে উঠেছেন। এখানে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের খান। এছাড়াও মহানগরের সহ-সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আসলামুল হক সভাপতি হতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে যাদের নামে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাদের এই সম্মেলনে নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে ঢাকা মহানগরের যেকোনো ওয়ার্ড থেকেও ।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন- মহানগরের দুই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও হাবিব হাসান। দুইজনই ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত দলে। এদের নামে তেমন কোনো গুরুতর অভিযোগ নেই বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সময় নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। দলের ভেতরে নেতৃত্বের জন্য প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু নেত্রীর (শেখ হাসিনার) আহ্বানে সাড়া দিয়ে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা থাকে তা সমাধান করবো। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিতর্কিত ব্যক্তিদের দল থেকে বাদ দিতে হবে। দল করতে হলে নিয়ম মানতেই হবে। নিয়মের বাইরে গেলে সে যেই হোক, তাকে ক্ষমা করা হবে না।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান সময় নিউজকে বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে সৎ, ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব বাছাই করা হবে । তিনি বলেন, দলের জন্য যারা নিবেদিত, দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে, শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল এমন লোকদের থেকেই নেতৃত্ব আসবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান সময় নিউজকে বলেন , আমরা যারা আওয়ামী লীগের তৃণমূলে রয়েছি, সবাই প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের ক্লিন ইমেজের যাদের অতীত ইতিহাস রয়েছে। যারা দলকে সুসংগঠিত করতে পারবে। যারা সব সময় নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। এমন নেতৃত্বই প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিবেন বলে আশা করি। তাহলেই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আরো বেশি শক্তিশালী হবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়।২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ কে উত্তর ও দক্ষিন হিসাবে বিভক্ত করা হয়। এরপর উত্তর ও দক্ষিণের, ৪৫টি থানা, ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সে সময় ঢাকা মহানগর উত্তরে আওয়ামী লীগের এ কে এম রহমতুল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দক্ষিণের সভাপতি হন আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক হন শাহে আলম মুরাদ।