সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ইদলিবের তুরস্ক সীমান্তে নতুন করে তুর্কি বাহিনীর কুর্দিবিরোধী অভিযান শুরু হলে, আন্তর্জাতিক মহলের নজর দৌমা থেকে ইদলিবে চলে যাবে বলেও ধারণা তাদের।
এদিকে তুরস্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ-মুহূর্তে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া দুদেশের সঙ্গেই তাল দিয়ে চলেছে। তাদের আশঙ্কা, সিরিয়া ইস্যুতে যেকোনো ধরনের ভুল সিদ্ধান্তে তুরস্ককে কড়া মাশুল গুণতে হবে।
সিরিয়ায় মার্কিন জোটের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে আরও হামলার হুমকি দেয়া হলেও, রাশিয়া বলছে, সিরিয়ায় আবারও হামলা চালানো হলে তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত মস্কো। আর সে-ক্ষেত্রে বিশ্বে এক নৈরাজ্যকর যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ অবস্থায়, বিশ্লেষকরা মন করছেন, যে আসাদকে রাসায়নিক হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। সিরিয়া ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্বের নজর শিগগিরই দৌমা থেকে ইদলিবের দিকে চলে যাবে বলেও ধারণা অনেকের।
সিরিয়ায় নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বেসিল ইস্টউড বলেন, 'মার্কিন জোটের এই বিমান হামলা এখনই আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে বরে মনে হয় না। আসাদ সরকারের প্রতি রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে। বরং রাসায়নিক হামলার বিষয়টি থেকে বিশ্ববাসীর নজর খুব শিগগিরই ইদলিবের দিকে চলে যাবে বলে বলে আমার ধারণা। কারণ, সেখানকার তুরস্ক সীমান্তে নতুন করে অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে, আর এটি হলে নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামারও আশঙ্কা রয়েছে।'
সিরিয়ায় মার্কিন জোটের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তুরস্ক নৈতিক সমর্থন দিলেও, দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে আঙ্কারা। খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক বিশ্বের নজর দৌমা থেকে ইদলিবে চলে যাবে বলে ধারণা তাদের। সিরিয়া ইস্যুতে কোন ধরনের ভুল পদক্ষেপ নিলে, তুরস্ককে কড়া মাশুল গুনতে হবে বলেও জানান আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপক ড. হাসান কোনি।
তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে কুর্দি ইস্যুটিই তুরস্কের কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অন্যদিকে, আমরা প্রেসিডেন্ট আসাদের ক্ষমতা দখল করে রাখার বিরুদ্ধে হলেও, সিরিয়া ইস্যুতে আমাদের কিছু অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। আর এ কারণেই তুরস্ক সরকার যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার স্বার্থরক্ষায় ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে।'
তবে, প্রেসিডেন্ট আসাদ ক্ষমতায় থাকুক আর নাই থাকুক, রাসায়নিক হামলার নামে সিরিয়ায় মার্কিন জোটের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এ অঞ্চলে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা বাড়াবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের অবনতিরও আশঙ্কা তাদের।