নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সিরিয়া সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্রয়োজনে যেকোন পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, রাশিয়া বলেছে সিরিয় বাহিনী নয় বরং সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আল নুসরাই অবরুদ্ধ পূর্ব গৌতায় রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকরের তাগিদ দিয়ে যতদ্রুত সম্ভব পূর্ব গৌতায় সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
সোমবারও পূর্ব গৌতার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় সিরিয় সেনাদের। এদিন পূর্ব গৌতার মিসরাবা এবং মেদেইরা শহরের দিকে ট্যাংক এবং ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অগ্রসর হতে দেখা যায় সিরীয় বাহিনীকে। শহর দুটির মধ্যে সংযোগ এলাকা এরইমধ্যে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করায়, সরকারি বাহিনীর সদস্যরা অন্যান্য অবরুদ্ধ এলাকা পুনরুদ্ধারে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায় সেনাবাহিনীর একটি সূত্র।
বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলাও অব্যাহত রাখে সিরীয় বাহিনী। অনলাইনে প্রকাশিত ছবিতে, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুসহ হতাহতদের উদ্ধার করতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেটস সদস্যদের।
সিরিয়ার সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং করণীয় ঠিক করতে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকে, জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি ঘোষণা দেন সিরিয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে যদি নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা পদক্ষেপ নেবে। সংঘাত বন্ধে যতদ্রুত সম্ভব ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আমরা জানি রাশিয়া তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোন মিল দেখা যাচ্ছে না। তারা বারবার বিমান হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, প্রতিদিনই বিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে পূর্ব গৌতায়। এ থেকে আমরা এটাই ধরে নিতে পারি, হয় আসাদ সরকারকে চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা তাদের নেই নয়তো তারা চাচ্ছে না সিরিয়ায় বিমান হামলা বন্ধ হোক।
তবে, রাশিয়া বলছে সিরিয়ার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করার সবকিছুই করছে আসাদ সরকার। পূর্ব গৌতা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য উল্লেখ করে ঐ অঞ্চল থেকে আল নুসরাসহ অন্যান্য বিদ্রোহীদের পুরোপুরি বিতাড়িত করতে সিরীয় বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান জাতিসংঘে রুশ প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া।
অখণ্ড এবং ঐক্যবদ্ধ সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যারা, সেই সন্ত্রাসীদের দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আসাদ সরকার। সন্ত্রাসীরাই বরং রাজধানী দামেস্কের আশপাশে সাধারণ মানুষের ওপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কোন সম্পর্ক নেই। সিরিয়ার জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলবে।
বৈঠকে পূর্ব গৌতায় সংঘাত বন্ধে আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকরে সব পক্ষকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও, এখনও অবরুদ্ধ রয়েছে পূর্ব গৌতার বহু এলাকা। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ এবং অসুস্থদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও, কার্যত তার কিছুই হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন গুতেরেস।